করোনা মাহামারীর তৃতীয় ডেউয়ে,দেশ টালমাটাল।
চারদিকে বিশুদ্ধ অক্সিজেনের জন্য হাহাকার।
হাসপাতলে শয্যা ফাঁকা নেই,আই.সি.ইউ’র জন্য কেউ না কেউ রয়েছেন কারো মৃত্যুর প্রতীক্ষায়,তাহলে যে বেড ফাঁকা হবে,প্রিয়জনের হয়তো ঠাঁই হবে আই.সি.ইউ নামক সোনার হরিণে।
কোভিড/করোনা নিয়ে আমাদের মাঝে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে,আছে অনেক ভুল ধারনা ও সঠিক জানার অভাব।আসুন আমরা কোভিড সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেইঃ
১) যেহেতু এটি একটি ড্রপলেট ইনফেকশন,সেহেতু শুধুমাত্র করোনা আক্রান্ত রোগীর হাঁচি,কাশি,হাসি,কথা বলার সময়ই তা বাতাসে ছড়িয়ে পরতে পারে।আপনার শ্বাসনালিকার মাধ্যমে তা আপনার শরীরে প্রবেশ করে আপনাকে করোনা সংক্রমিত করতে পারে।এজন্য মাস্কের এবং সামাজিক দূরত্বের কোন বিকল্প নেই।
২)করোনা আক্রান্ত রোগীর শরীরের স্পর্শ লাগলে বা তার স্পর্শযুক্ত কোন কিছু ধরলে করোনা সংক্রমিত হবে না।তবে যেহেতু এই জিনিসগুলিতে করোনা রোগীর লালা বা ড্রপলেট এর মাধ্যমে ভাইরাস লেগে থাকতে পারে,তাই এগুলি স্পর্শ করার পর অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত না ধুয়ে বা জীবাণুনাশক ব্যবহার না করে নাকে বা মুখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩)বাড়িতে অথবা আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কারো করোনার লক্ষণ থাকলে,তা না লুকিয়ে দ্রুত কোভিড পরীক্ষা করে নিন।মৃদু সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাসায় ওষুধ সেবন করুন এবং নিয়মকানুন মেনে চলুন।প্রয়োজনে টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করুন।
৪)করোনার মৃদু সংক্রমণ নিয়ে বাসায় চিকিৎসা গ্রহন কালে,Pulse oximeter দিয়ে মাঝে মাঝে অক্সিজেন স্যাচুরেশন রেকর্ড করবেন।যদি কখনো তা ৯৩% এর নীচে নেমে আসে অথবা তীব্র শ্বাষকষ্ট অনুভব হয়, তাহলে দেরী না করে দ্রুত হাসপাতলে যান।আপনাকে সেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন দেওয়া হবে।
৫)অক্সিজেন যেমন জীবন রক্ষাকারী, তেমনি অপ্রয়োজনে অক্সিজেন গ্রহন জীবন সংশয়ের কারণ হতে পারে।তাই বাসায় অক্সিজেনের অপ্রয়োজনীয় মজুদ করবেন না।এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অক্সিজেন গ্রহণ করবেন না।
৬)বাসায় কোভিড আক্রান্ত কেউ থাকলে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন এবং তার সংস্পর্শে গেলে মাস্ক পরে যান।তাকে মানসিক শক্তি যোগান,সাহস দিন।স্ট্রেসমুক্ত রাখুন।ভয় পেয়ে তাকে দূরে ঠেলে দিবেন না।এতে তিনি মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে যেতে পারেন।
৭)বাড়ীতে করোনা আক্রান্ত রোগী না থাকলে মাস্ক পরে থাকার দরকার নেই।
৮) করোনাকালীন সময়ে শুধুশুধু বাসায় শুয়ে বসে থাকবেন না।এতে শরীরে অপ্রয়োজনীয় চর্বি জমে নানা রোগব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে।এসময়ে ছাদে হাঁটুন,বাগান করুন,শরীরচর্চা করুন।এতে ফুসুফুসে ফ্রেস অক্সিজেন পাবে।চাঙ্গা থাকবে শরীর ও মন।
৯)করোনা থেকে রক্ষা পাবার জন্য কোন ওষুধ নেই।সেজন্য বিভিন্ন বিজ্ঞাপন বিভ্রান্ত হয়ে সংক্রমিত হবার পূর্বেই কোনরুপ ওষুধ গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই।এতে শারীরিক নানাবিধ ক্ষতি হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ওষুধ সেবন করবেন না।
১০)পুষ্টিকর খাবার দাবার গ্রহণ করুন,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করুন।
১১) সরকারি বিধি মোতাবেক করোনা টিকা গ্রহণ করুন
১২)কুসংস্কার দূর করুন,সচেতনতা সৃষ্টি করুন।
১৩) সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন।
১৪) ঘন ঘন হাত ধৌত করুন।অপরিস্কার হাত দিয়ে নাক মুখ স্পর্শ থেকে বিরত থাকুন।
––এরপরেও যদি কোন লক্ষণ থাকে বা কোভিড আক্রান্ত হয়ে যান,তাহলে ভয় না পেয়ে দ্রুত চিকিৎসকের সেবা গ্রহণ করুন।প্রয়োজনে টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করুন।আমরা রয়েছি আপনার পাশে।চিকিৎসা নিন,সুস্থ থাকুন।
@ডা.ফাতেমা খান
কোভিড-১৯ বিষয়ক মাস্টার ট্রেইনার ও চিকিৎসক।
এম & ই অফিসার,টি.বি কন্ট্রোল প্রজেক্ট, ঢাকা আহসানিয়া মিশন।