Hypertension বা উচ্চ রক্তচাপ - ডাঃ মোঃ আরিফুল ইসলাম, নবজাতক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ

আজ ১৭ই মে  হাইপারটেনশন (Hypertension) বা উচ্চ রক্তচাপ দিবস। ‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১৭-১৮’ এর হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি ৪ জনে ১ জন উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছেন।
হাইপারটেনশন (Hypertension) বা উচ্চ রক্তচাপঃ 
হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে রক্ত প্রবাহের চাপ অনেক বেশি থাকলে সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সাধারনভাবে, যদি কোনও একজনের হৃদ-সংকোচন বা সিস্টোলিক রক্ত চাপ উভয় বাহুতে ১৪০ মিলিমিটার মার্কারি বা তার উপরে থাকে কিংবা হৃদ-প্রসারণ বা ডায়াস্টলিক চাপ ৯০মিলিমিটার মার্কারি বা তার উপরে থাকে,তাহলে তার উচ্চ রক্ত চাপ বলা যেতে পারে।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি।

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাঃ
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অঙ্গে জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
১)অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থেকে হৃদযন্ত্রের পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং এর  হার্ট ফেল করতে পারে।
২) রক্তনালীর দেয়াল সঙ্কুচিত হয়ে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও থাকে।
৩)উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
৪) মস্তিষ্কে স্ট্রোক বা রক্তক্ষরণও হতে পারে।
৫) উচ্চ রক্তচাপের কারণে রেটিনায় রক্তক্ষরণ হয়ে একজন মানুষ অন্ধত্বও বরণ করতে পারেন।

লক্ষণঃ
উচ্চ রক্তচাপের একেবারে সুনির্দিষ্ট কোন লক্ষণ সেভাবে প্রকাশ পায় না। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে:
• প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করা, মাথা গরম হয়ে যাওয়া এবং মাথা ঘোরানো
• ঘাড় ব্যথা করা
• বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
• অল্পতেই রেগে যাওয়া বা অস্থির হয়ে শরীর কাঁপতে থাকা
• রাতে ভালো ঘুম না হওয়া
• মাঝে মাঝে কানে শব্দ হওয়া
• অনেক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা
এসব লক্ষণ দেখা দিলে নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করতে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ।

উচ্চ রক্তচাপের কারণঃ
• সাধারণত মানুষের ৪০ বছরের পর থেকে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে
• অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা
• পরিবারে কারও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে
• নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম না করলে
• বেশি লবণ খেলে
• ধূমপান বা মদ্যপান বা অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাদ্য/পানীয় খেলে
• দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা হলে
• শারীরিক ও মানসিক চাপ থাকলে
• কাজের চাপ, 
• অতিরিক্ত আওয়াজ এবং ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকা
•  ডায়াবেটিস 
•  কিডনি রোগ
• হাইপারথাইরয়েড

 রক্তচাপ নির্ণয়ঃ
 
রক্তচাপ মাপার যন্ত্র(স্ফিগমোম্যানোমিটার)
 একবার রক্তচাপ বেশি দেখা গেলেই যে কারও উচ্চ রক্তচাপ আছে, সেটা বলা যাবে না।
পর পর তিন মাস যদি কারও উচ্চ রক্তচাপ দেখা যায়, তখনই বলা যাবে যে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে।
আর যারা দীর্ঘ দিন ধরে রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের প্রতি সপ্তাহে একবার প্রেশার মেপে দেখা উচিত।

উচ্চ রক্তচাপ হলে করণীয়ঃ
জীবনযাপনে পরিবর্তন আর নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। 
• খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া। 
• ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা।
• ওজন নিয়ন্ত্রণ করা। 
• নিয়মিত ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম করা। 
• মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা কম করা।
• খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা - মাংস, মাখন বা তেলে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় এবং  অতিরিক্ত কোলেস্টরেল জাতীয় খাবার পরিহার করে ফলমূল শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
• ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন।

ডাঃ মোঃ আরিফুল ইসলাম 
এমবিবিএস, বিসিএস, ডিসিএইচ, এমএসিপি
নবজাতক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ