অনেকেই মলদ্বারের নানান ধরনের ব্যথায় ভুগে থাকেন। এই ব্যথা সূত্রপাত সাধারনত হয়ে থাকে মলদ্বারে ঘা অথবা ফেটে যাওয়া থেকে। মলদ্ধার এরূপ ঘা অথবা ফেটে যাওয়াকে এনাল ফিশার বলে। এনাল ফিশার দুই ধরনের হয়।
১. একিউট (তীব্র) ফিশারঃ একিউট এনাল ফিশার হলে রোগীর মলদ্বারে অসম্ভব ব্যথা হয়। একিউট এনাল ফিশার রুগীদের মলদ্বার পরীক্ষা করলে দেখা যায় তাদের মলদ্বার খুবই সংকুচিত অবস্থায় আছে। মলদ্বারের ভেতরের ঘা থাকার কারণে এটি দেখা কষ্টকর হয়ে দাড়ায়। তীব্র ব্যথার কারণে মলদ্বারের কোনো যন্ত্রও প্রবেশ করানো যায় না। শুধুমাত্র সরু একটি যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা যায়।
২. ক্রনিক (দীর্ঘস্থায়ী) ফিশারঃ ক্রনিক এনাল ফিশারে ব্যথার ক্ষেত্রে একিউট ফিশারের থেকে তারতম্য হয়। ক্রনিক ফিশার যে কোনো বয়সে হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী এনাল ফিশারের ক্ষেত্রে একটি মাংসপিণ্ড বা গেজ দেখা দিতে পারে। এটি মলদ্বারের বাহিরে বা ভেতরে একটি মাংসপিণ্ড দেখা যেতে পারে। এ মাংশপিণ্ডকে অনেকে টিউমার ভেবে ভুল করে থাকে। এ ক্ষেত্রে টিউমার বা প্রদাহজনিত কারণ চিহ্নিত করার জন্য পায়ুপথের ভেতর যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা উচিত। দীর্ঘস্থায়ী ফিশার সংক্রমিত ফলে কখনও ফোঁড়া হয়ে ফিস্টুলা (ভগন্দর) হয়ে পুঁজ পড়তে পারে।
যেসব কারনে পাইলসের সমস্যা হয়ঃ
পাইলসের সমস্যার জন্য দায়ী সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দেয়া। এছাড়াও শক্ত মল বের হওয়ার সময় অতিরিক্ত চাপের ফলে মলদ্বার ফেটে যায় বলে মনে করা হয়। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় আঁশযুক্ত খাবারের স্বল্পতারও একটি অন্যতম কারন। আঁশযুক্ত খাদ্য তালিকার মধ্যে রয়েছে আলু, শাকসবজি, কাঁচা ফলমূল, ইসবগুলের ভূসি, ছোলা ইত্যাদি। মদপান বা চা-কফিতে অসক্ত থাকার সাথে পাইলসে সমস্যার কোনো সম্পর্ক নেই।
ঘনঘন মলত্যাগ ও ডায়রিয়া হলে ফিশার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
এনাল ফিশার এবং পাইলসের উপসর্গ
সাধারণত মলত্যাগের পরে থেকে শুরু হয়ে কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্তও এ ব্যথা চলতে থাকে। ফিশারের প্রদান লক্ষন রক্তক্ষরণ আবার ক্ষেত্র বিশেষে রক্তক্ষরণ নাও হতে পারে। ধারনা করা হয়, প্রকটালজিয়া ফুগাক্স নামক এক ধরনের রোগেও ফিশারের ব্যথার মত মলদ্বারে ব্যথা হয় কিন্তু সে ব্যথা মলত্যাগের সাথে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় না।
অনেক ক্ষেত্রে রুগী অভিযোগ করে থাকেন মলদ্বারে চাকা আছে বলে। রক্তজমাট বাঁধার কারনেও এরকমটি মনে হতে পারে। ক্রনিক এনাল ফিশার রুগীদের ক্ষেত্রে উপসর্গ টা একটু ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তাদের ক্ষেত্রে মনে হতে পারে অতিরিক্ত মাংশপিন্ড আছে মলদ্বারে, চুলকানি, পুঁজপড়া এ সব উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
কিছু ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ হতেও পারে নাও হতে পারে। আবার অনেক সময় ব্যথা তীব্রতা কম-বেশিও হতে পারে। ফিশারের রুগীরা অনেক সময় প্রস্রাব করার সময় তিব্র ব্যথা অনুভব করেন। কখনও কখনও মহিলারা শারীরিক মিলনের সময় বেদনা অনুভব করে থাকেন। রুগী বুজতে পারেন যে তার কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে মলত্যাগে ব্যথা অনুভত হচ্ছে, অনেক সময় রুগী ব্যথার ভয়ে টয়লেটেও যেতে চান না এবং বেগ আসলেও ভয়ে সাড়া দেন না।
প্রতিরোধ
প্রতিদিন আমাদের খাদ্যতালিকাই আঁশযুক্ত খাবার রাখতে হবে। আঁশযুক্ত খাদ্য তালিকার মধ্যে রয়েছে আলু, শাকসবজি, কাঁচা ফলমূল, ইসবগুলের ভূসি, ছোলা ইত্যাদি। বেশি শক্তি প্রয়োগ করে মলত্যাগ না করা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে যাতে না হই সে দিকে সব সময় খেয়াল রাখা, এজন্য খাদ্যাভ্যাসের প্রতি নজর দেওয়া জরুরী। ডাইরিয়া হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া এবং ঘন ঘন মলত্যাগের অভ্যাস পরিহার করতে হবে।
চিকিৎসা
বিনা অপারেশনে ভালো হওয়ার জন্য ফিশার সমস্যার শুরুর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ নিলে আপনি একিউট ফিশার অবস্থাতেই ভালো হওয়া সম্ভাব। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল চিকিৎসা এবং মলদ্বারের স্ফিংটারে অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে। সেক্ষেত্রে আপনি একজন Colorectal Surgery(Piles) - এনাল ফিশার এবং পাইলস বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।