অনেকেই আছেন যাদের হাতের তালু অতিরিক্ত পরিমাণ ঘামে।পরীক্ষা হলে লিখতে গিয়ে খাতা ভিজে নষ্ট হয়ে যায় বা ছিড়ে যায়।কলম পিছলে যাওয়ায় লিখতেও অনেক কষ্ট হয়।বার বার হাত মুছতে হয়।অফিসে ফিংগার প্রিন্ট দিতে গিয়ে বা কারো সাথে করমর্দন করতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হয়।ল্যাপটপ,ডেস্কটপ ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স এর জিনিসপত্র ব্যবহার করতে গিয়ে ভেজা হাতের জন্য দূর্ঘটনার শিকার হতে হয়। একে Palmer Hyperhidrosis বলা হয়।
আবার অনেকে আছেন,যাদের পায়ের তালু অনেক ঘামে।মোজা পড়লে পা ভিজে অস্বস্তি হয়, না পড়লে পা ঘামার কারণে পছন্দসই জুতা পড়তে পারেন না। ঘামে পা পিচ্ছিল হয়ে,চলাফেরায় সমস্যা হয়।পায়ে দুর্গন্ধ হয়। দীর্ঘসময় ভেজা থাকার কারণে পায়ে ফাংগাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ দেখা দেয়।এই পা ঘামা’কে বলা হয় Planter Hyperhidrosis.
যদি কারো হাত ও পা উভয়ই অতিরিক্ত ঘামে তবে তাকে Palmoplanter Hyperhidrosis বলা হয়।
হাত-পায়ের তালু অতিরিক্ত ঘামার কারণ কিঃ
ঠিক কি কারণে আপনার হাত পা ঘামছে তা অজানা। তবে নিম্নলিখিত সমস্যার কারণে হাত বা পা অতিরিক্ত ঘামতে পারেঃ
১)অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়(চা,কফি) ও অ্যালকোহল পান করলে অ্যাপোক্রাইন গ্রন্থি থেকে মাত্রারিক্ত ঘাম বের হতে পারে।
২)ব্লাড সুগার লো বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলেও এমনটি হতে পারে।
৩)কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে হতে পারে।
৪)মহিলাদের মেনোপজ়ও এর একটা অন্যতম কারণ।
৫)যাদের হাইপারথাইরয়েডইজম আছে।
৬)অতিরিক্ত ঝাঁল বা মশলাযুক্ত খাবার।
৭)হতাশা,দুশ্চিন্তা, পারিবারিক অশান্তি।
৮) উলেন বা পলিস্টারের মোজা,টাইট জুতা অনেক সময় ধরে পরে থাকার কারনেও ঘাম হতে পারে।
প্রতিকারঃ
১) বাজারে অনেক ধরনের অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট কিনতে পাওয়া যায়। রাতে শুতে যাওয়ার আগে হাতে ও পায়ের তলায় লাগিয়ে শুতে যান।
২)চা,কফি বা ক্যাফেইনজাতীয় পানীয়র অভ্যেস ত্যাগ করুন।
৩)ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
৪)প্রচুর পানি পান করুন।
৫)নিয়মিত দু’বেলা গোসল করুন।কিন্তু গরম পনিতে গোসল করার অভ্যেস পরিহার করুন, এতে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। হাত-পা’য়ে অনেক ঘাম হতে পারে।
৬) পানিতে বার বার হাত-পা ধুয়ে নিন। পানির কলের নিচে কিছুক্ষণ ধরে হাত-পা ধুলে, সাময়িকভাবে কিছুক্ষণের জন্য ঘামানো বন্ধ করা যাবে।
৭)পা ধোয়ার পর কখনও ভেজা অবস্থায় রেখে দেবেন না। শুকনো কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মুছুন। না হলে পায়ে জীবাণু জন্ম নিতে পারে, গোড়ালি ফেটে যেতে পারে, ঘাম হতে পারে, পায়ে দুর্গন্ধও হতে পারে।
৮)পা ঘামা কমাতে চেষ্টা করুন অন্তত বাড়়িতে খালি পায়ে থাকতে। মেঝে যদি পরিষ্কার থাকে, সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
৯)ভেজা জুতো পরবেন না।পরার আগে পুরোপুরি শুকিয়ে নিন।
১০)অতিরিক্ত টাইট মোজা পরবেন না।
১১)হতাশা, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ কমে গেলে হাত ঘামা বন্ধ হতে পারে।
১২) প্রেসক্রিপশন মেডিসিনঃ অতিরিক্ত সমস্যা হলে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মত ওষুধ সেবন করুন।
১৩)এছাড়াও বর্তমানে আয়োন্টোফোরোরিস,বোটক্স, রেডিয়োফ্রিকুয়েন্সী মাইক্রোনিডলিং, সার্জারি সহ নানাবিধ আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে।
হাত-পায়ের তালু ঘামা কোন গুরুতর রোগ নয়, হতে পারে এটা কোনো রোগের লক্ষণ! তাই এই সমস্যা দেখা দিলে হেলাফেলা না করে অতিসত্বর একজন চর্মরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ এবং চিকিৎসা নিন।
@ ডা.মোঃ মুরাদ হোসেন
এমবিবিএস, বিসিএস(স্বাস্থ্য), ডিডি(থাইল্যান্ড)
ডার্মাটোলজিস্ট ও এস্থেটিক সার্জন
কনসাল্টেন্ট
কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, উত্তরা,ঢাকা-১২৩০।