শিশুর কৃমিঃ লক্ষণ ও করণীয়

আমাদের দেশে কৃমির সংক্রমণ খুব খুব কমন একটি বিষয়। কৃমি শুধু বাচ্চাদের নয়, এডাল্টেও খুব কমন সমস্যা। কিন্তু কৃমির সংক্রমণ এর উপসর্গ খুব একটা প্রকাশ পায়না এবং হালকা উপসর্গ দেখা দিলেও সবাই এটা মানতে রাজী হয়না। অনেক সময় রোগীকে কৃমির ঔষধ দিলে রোগী খেতে চায়না, নিজে নিজে ভেবে নেয় আমি খুব পরিষ্কার; আমার বা আমার বাচ্চার কৃমি হয়নি।

আমাদের দেশে প্রতি ৫ জন এডাল্ট মানুষের ১ জন কৃমিতে আক্রান্ত। বাচ্চাদের বেলায় এই হারটা অনেক বেশি। ছোট বাচ্চাদের বেশি সংক্রমণ করে সুতাকৃমি, এছাড়াও বক্র কৃমি, গোল কৃমি, হুইপ ওয়ার্ম আমাদের দেশে কমন। চলুন জেনে নেই কি কি উপসর্গ দেখা দিতে পারে কৃমির সংক্রমণে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কৃমির সংক্রমণের কোন লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়না। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেসব উপসর্গ পরিলক্ষিত হয় সেগুলো হলোঃ

  • ওজন কমে যাওয়া

  • পেটে হালকা ব্যাথা হওয়া

  • বমি বমি ভাব হওয়া

  • খিটখিটে আচরণ বেড়ে যাওয়া

  • বমি বা কাশি হওয়া

  • মলদ্বারে চুলকানি হওয়া

  • চুলকানির কারণে ঘুম কমে যাওয়া

  • পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া

  • মেয়ে বাচ্চাদের প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ বেরে যাওয়া এবং প্রস্রাবের সময় ব্যাথা হওয়া।

  • অন্ত্রে ক্ষত সৃষ্টি করে রক্তপাত করা এবং রক্তশূন্যতা দেখা দেয়া

  • রুচি চলে যাওয়া, খাওয়া কমে যাওয়া

  • খাবার হজম না হওয়াতে ডায়ারিয়া হওয়া

  • পিকা বা খাওয়ার জিনিস নয় সেসব খেতে চাওয়ার আগ্রহ (যেমন মাটি)

কৃমির কারণে কিছু জটিল সমস্যা সৃষ্টি হতে পারেঃ
  • অন্ত্রে কৃমি বেড়ে গিয়ে জমাট বেধে বাওয়াল অবস্ট্রাকশন বা পায়খানার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়া।

  • কৃমি পিত্তথলিতে বা লিভারে চলে গিয়ে ইনফেকশন বা প্রদাহ করা।

  • কৃমির কারণে খিচুনী হতে পারে।

তবে মনে রাখবেন কৃমির সংক্রামন বেশি হলে তবেই এই লক্ষণ গুলো পরিলক্ষিত হবে। কৃমির সংক্রমণ যদি কম থাকে তবে এসব লক্ষন নাও থাকতে পারে।

কিভাবে বাচ্চা কৃমিতে আক্রান্ত হতে পারে?

দূষিত মাটি, পানি থেকে মানুষ কৃমিতে আক্রান্ত হয় বেশি। এছাড়া বাজার থেকে আনা শাক সবজি মাছ মাংস ঠিক ভাবে না ধুয়ে খেলে বা অর্ধ সিদ্ধ খাবার খেলে কৃমির সংক্রামন হতে পারে। সাধারণত মাটি বা পানি থেকে কৃমির ডিম বা লার্ভা বাচ্চা বা বড় মানুষের হাত বা পায়ে লেগে যায়। কিছু সময় এসব লার্ভা হাত থেকে মুখের মাধ্যমে অন্ত্র চলে যায়। কিছু ক্ষেত্রে এসব লার্ভা স্কিন ভেদ করে শরীরে প্রবেশ করে।

কৃমির সংক্রামণ রোধে কি ব্যবস্থা নিবেন?

  • নখ বড় রাখা যাবে না

  • বাসার গৃহপরিচারিকার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন

  • ২-৩ দিন পর পর জীবানু নাশক দিয়ে বাসার ফ্লোর পরিষ্কার করবেন

  • শিশুকে খালি পায়ে না রাখা উত্তম

  • শিশু যেন ময়লা অবর্জনা পরিহার করে খেলাধুলা করে

  • খালি মাটিতে খেলা পরিহার করুন

  • খাবার আগে এবং টয়লেটের পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া

  • পানি ফুটিয়ে বা ফিল্টার করে ব্যবহার করুন

১ বছরের আগে বাচ্চাকে কৃমির ঔষধ দেয়া যাবে না। কিন্তু ১ বছর হয়ে গেলে নিয়মিত ৬ মাস অন্তর অন্তর বাচ্চাকে কৃমির ঔষধ অবশ্যই দিবেন। একবার ঔষধ খাওয়ানোর ৭-১০ দিন পর পুনরায় প্রাথমিক ডোজ দিতে হবে। কৃমির ঔষধ কৃমিকে মেরে ফেলে কিন্তু কৃমির ডিম এবং লার্ভা মারতে পারে না। তাই ৬ মাস পর পর বাচ্চাকে কৃমির ঔষধ অবশ্যই দিতে হবে। কৃমি একজনের কাছ থেকে অন্যজনের কাছে ছড়ায় বিধায় পরিবারের সকলে একসাথে কৃমির ঔষধ খাবেন।

© Dr-Adnan Al Berunie
MBBS, MS (Phase A), MCGP, PGT, CCD
Resident Doctor, Dhaka Sishu Hospital.